পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

'Bongobani' by Abdul Hakim

বঙ্গবাণী 

আব্দুল হাকিম


 
কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস। 
সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ।। 
তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন। 
নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।। 
আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ। 
দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।। 
আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত। 
যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত।। 
যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ। 
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।। 
সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী। 
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।। 
মারফত ভেদে যার নাহিক গমন। 
হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গণ।। 
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। 
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।। 
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়। 
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।। 
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি। 
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।

'Premiker protidondi' by Abul Hassan



প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী 

আবুল হাসান


অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়ে 

অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে 

যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ 

যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা 

যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা


যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী 
আঁচলে আগলা করো কোমলতা, অন্ধকার 
মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন 
আমি ফিরব না আর, আমি কোনদিন 
কারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ 
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।

'Nishongota' by Abul Hassan


নিঃসঙ্গতা 

----আবুল হাসান


অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক! 

অতটা চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভিড়, অত সমাগম! 
চেয়েছিল আরো কিছু কম! 

একটি জলের খনি 
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল 

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!

'Bristy chinhito bhalobasha' by Abul Hassan



বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসা 

----আবুল হাসান



মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল ? 

একবার ডাউন ট্রেনের মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিল  

আমাদের ইস্টিশনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো 

উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা; 

ছোট-খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায়-পাড়ায় 

জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান।

তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙে যাইনি মিটিং-এ 
থিয়েটার পণ্ড হলো, এ বৃষ্টিতে সভা আর 
তাসের আড্ডার লোক ফিরে এলো ঘরে; 
ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা,

সারাদিন অমুক নিপাত যাক, অমুক জিন্দাবাদ 
অমুকের ধ্বংস চাই বলে আর হাবিজাবি হলোনা পাড়াটা।

ভদ্রশান্ত কেবল কয়েকটি গাছ বেফাঁস নারীর মতো 
চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায় হঠাৎ বাতাসে আর 
পাশের বাড়ীতে কোনো হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা 
স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার !

আর ক’টি চা’খোর মানুষ এলো 
রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে; 
তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলা থেকে শোনা গেল : 
কী করি বলুন দেখি, দাঁত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছেনা, 
ডাক্তারের কাছে যাই তবু শুধু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই 
হৃদরোগ, চোখের অসুখ !

একজন বেরসিক রোগী গলা কাশলো : 
ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশী লেবু দিও।

তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু 
সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের 
কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল, 
সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে 
আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন

আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল !

'Ekla batash' by Abul Hassan


একলা বাতাস 

আবুল হাসান

নখের ভিতর নষ্ট ময়লা, 

চোখের ভিতর প্রেম, 

চুলের কাছে ফেরার বাতাস 

 দেখেই শুধালেম,

এখন তুমি কোথায় যাবে?

  কোন আঘাটার জল ঘোলাবে? 

কোন আগুনের স্পর্শ নেবে 

 রক্তে কি প্রব্লেম?

হঠাৎ তাহার ছায়ায় আমি যেদিকে তাকালেম 

 তাহার শরীর মাড়িয়ে দিয়ে 

 দিগন্তে দুইচক্ষু নিয়ে  

আমার দিকে তাকিয়ে আমি আমাকে শুধালেম

এখন তুমি কোথায় যাবে? 
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?  
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে 
রক্তে কি প্রব্লেম?

'Jotsnay tumi kotha bolcho na keno' by Abul Hassan

জ্যোৎস্নায় তুমি কথা বলছো না কেন 

----আবুল হাসান

প্রতিটি নতুন কথা বলাটাই হলো আমাদের প্রেম,
প্রতিটি নতুন শব্দই হলো শিল্পকলার সীমাঃ
হে অসীমা তুমি কথা বলছো না কেন ?
ওষ্ঠে কাঁপন ধরানোই হলো
নিবিড় নিহিত আবেগের চুম্বন।
এসো তবে ঠোঁটে কাঁপন ধরাই
দু’জনের ঠোঁটে দূরের কুজন, হাওয়া শনশন্ চুম্বন গড়ে তুলি।
একাকী থেকেও এখন আমরা এসো দু’জনের মুগ্ধতা আনি মুখে
কপালে কাঁপাই ভ্রূযুগল অনুভূতি।
বাতাসে বহাই চক্ষুর সম্মতি।
এসো সতী মেয়ে আবার আমরা শুয়ে পড়ি, সেতু বাঁধি
দুই শরীরের মিলনে ঐকতান,
সংরাগে দেই সুন্দর করতালিঃ
আমাদের দুটি হৃদয়ে আজকে প্রথম ধরেছে কলি,
এসো উদ্যানে পুষ্প পবনে অঙ্গার হয়ে জ্বলি।
সূর্যে তারায় শত শনশন সবুজ ডেরায় আমি তুলি ঝঙ্কার
কান পেতে তুমি তাই শোনো মৃত্তিকা,
এসো সুন্দর, এসো হে শহরতলী,
আমাকে বানাও ঘন সবুজের শিখা,
তুমি তো বনস্থলী,
তোমাকে কে চেনে আর
আমি ছাড়া আর কে জানে তোমার কেন এ অহঙ্কার,
কেন নিশ্চুপ, কথা বলছো না হৃদয়ে পূর্ণিমার
জ্যোৎস্নায় তুমি কথা বলছো না কেন।

'Protikkhar shokhgatha' by Abul Hassan


প্রতিক্ষার শোকগাথা 

----আবুল হাসান

তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ পড়ে আছে দ্যাখো প্রশান্ত টেবিলে
আর আমার হাত ঘড়ি
নীল ডায়ালের তারা জ্বলছে মৃদু আমারই কব্জিতে !

টুরিস্টের মতো লাগছে দেখতে আমাকে
সাংবাদিকের মতো ভীষণ উৎসাহী

এ মুহূর্তে সিগ্রেটের ছাই থেকে
শিশিরের মতো নম্র অপেক্ষার কষ্টগুলি ঝেড়ে ফেলেছি কালো এ্যাসট্রেতে !

রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আজ স্বাতী ?

তোমার কথার মতো নরম সবুজ
কেকগুলি পড়ে আছে একটি পিরিচে

তোমার চোখের মতো কয়েকটি চামচ !

তোমার হাসির মতো উড়ছে চাইনিজ পর্দা রেস্তোরাঁয়

আর একটি অস্থির নীল প্রজাপতি পর্দার বুনট থেকে উড়ে এসে
ঢুকে গেছে আমার মাথায় !

রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসছোনা আজ স্বাতী ?

রেস্তোরাঁয় তুমি কি আসবেনা আর স্বাতী ?